ভাতের মাড়ের স্বাস্থ্যকর গুণাবলী

ভাত, বাঙালিদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একটি প্রচলিত কথা আছে, আমরা বাঙালিরা ‘মাছে-ভাতে’ পরিচিত। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই ভাতের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওয়াশিংটন থেকে ক্রেমলিন, সুমাত্রা থেকে সিডনি পর্যন্ত ভাতকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের খাবার তৈরি হচ্ছে, যা বিভিন্ন জাতি ও ভাষার মানুষের কাছে সমান প্রিয়।

তবে ভাতের সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সম্পর্কিত ধারণা আমাদের অনেকেরই অজানা। এটি হলো ভাতের মাড়। সাধারণত ভাত রান্নার পরে মাড় ফেলে দেওয়া হয়, কিন্তু এই মাড়ে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।

গবেষণায় প্রমাণিত, শরীরের স্বাস্থ্য বজায় রাখা থেকে শুরু করে ত্বকের যত্নে ভাতের মাড় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ, এবং ভিটামিন ই-এর মতো উপাদান, যা আমাদের শরীর গঠনে সাহায্য করে। এমনকি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও ভাতের মাড় কার্যকরী। প্রাচীন শাস্ত্রে ভাতের মাড়ের উপকারিতা উল্লেখ করা হয়েছে, যা আধুনিক গবেষণার মাধ্যমেও প্রতিষ্ঠিত।

ভাতের মাড়ের উপকারিতা

১. চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি:
গোসলের আগে ভাতের মাড় চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়, চুল পড়া কমায় এবং স্কাল্পের নানা সমস্যা দূর করে। ফলে চুল হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ও সুস্থ।

২. ত্বকের যত্নে কার্যকর:
ভাতের মাড়কে প্রাকৃতিক টোনার বলা যায়। প্রতিদিন ত্বকে এটি লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করলে ত্বকের ছিদ্র ছোট হয় এবং জমে থাকা মৃত কোষ দূর হয়। রাতে তুলার সাহায্যে মাড় সারা মুখে লাগিয়ে রেখে সকালে ধুয়ে নিলে ত্বক আরও মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

৩. ব্রণের সমস্যা কমায়:
প্রতিদিন ভাতের মাড় ব্যবহার করলে ব্রণ কমে। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের প্রদাহ কমায়, ফলে ত্বক হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যকর।

৪. ডায়ারিয়ার প্রতিকার:
ডায়ারিয়া হলে এক গ্লাস ভাতের মাড়ের সাথে অল্প লবণ মিশিয়ে খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় খনিজ সরবরাহ হয়। এটি পেটের সমস্যা কমায় এবং দ্রুত আরোগ্য লাভে সাহায্য করে।

৫. এনার্জি বৃদ্ধিতে সাহায্য:
শারীরিক পরিশ্রমের আগে এক গ্লাস ভাতের মাড় খেলে শরীরে অ্যামিনো অ্যাসিড এবং কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি শরীরকে শক্তি যোগায় এবং পেশি গঠনে সাহায্য করে।

৬. কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান:
নিয়মিত দুই গ্লাস ভাতের মাড় পান করলে পেটের মুভমেন্টে উন্নতি হয়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকে দূর করে।

ভাতের মাড়ের এই উপকারিতাগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাতে পারলে এটি হতে পারে একটি সহজ ও কার্যকরী স্বাস্থ্যসমাধান। তাই রান্নার পরে ভাতের মাড় ফেলে না দিয়ে এর উপকারী দিকগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন