অস্ট্রেলিয়ান ওপেন: টেনিসের সিলিকন ভ্যালি হয়ে ওঠার গল্প
প্রতি জানুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন দেখার জন্য মেলবোর্নে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে, বিশেষ করে শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে।
সূর্যজ্জ্বল আবহাওয়া, উষ্ণ পরিবেশ, আর মেলবোর্ন পার্কে অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যাহ্নে বিয়ার পান এবং সারাদিনের আড্ডা—এসবই এটিকে আলাদা করে তোলে। রজার ফেদেরার যথার্থই এই টুর্নামেন্টকে “হ্যাপি স্ল্যাম” নামে অভিহিত করেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন কখনোই টেনিসকে কোনো ভঙ্গুর ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে উপস্থাপন করেনি, যেখানে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। এটি এমন এক আসর যা টেনিসের ভবিষ্যৎ পথ দেখানোর জন্য প্রতিনিয়ত নতুন কিছু উদ্ভাবন করে চলেছে। ইয়ারা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত এই টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো রিট্র্যাকটেবল ছাদ, ১০-পয়েন্ট টাইব্রেকার, এবং খেলোয়াড়দের টানেলের ক্যামেরা ব্যবহার শুরু হয়। যেমনভাবে ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্রে নতুন উদ্ভাবনের ক্ষেত্র, ঠিক তেমনই অস্ট্রেলিয়া টেনিসে নতুন ধারণা পরীক্ষার ক্ষেত্রে পথিকৃত।
টেনিস অস্ট্রেলিয়ার উদ্ভাবন প্রধান মাচার রেইড বলেছিলেন, “আমরা সবসময় ব্যবসা এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।”
এবারের নতুনত্ব ও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত
এ বছরের টুর্নামেন্টে উদ্ভাবনের অনেক উদাহরণ দেখা গেছে। তিনটি প্রধান কোর্টে কোচরা এবার খেলোয়াড়দের কাছাকাছি বসছেন, হাতে ট্যাবলেট নিয়ে সরাসরি পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করছেন। আগে যেখানে তারা স্ট্যান্ডে বসে দূর থেকে নির্দেশ দিতেন, এখন তারা সরাসরি খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন। এমনকি যারা কোচিংয়ের বিপক্ষে ছিলেন, তারাও এই পদ্ধতির সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছেন।
বিশ্বের ২ নম্বর টেনিস খেলোয়াড় আলেকজান্ডার জভেরেভ বলেন, “টেনিস সবসময়ই একক খেলা, যেখানে নিজের সমস্যাগুলোর সমাধান নিজেকেই খুঁজে বের করতে হয়। তবে খেলাটি যদি এই পথে এগোয়, তাহলে সেটা পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য।”
ইগা শিয়োনতেক এবং তার কোচ উইম ফিসেটের মধ্যকার পয়েন্টের মাঝে কথোপকথন কিংবা নোভাক জকোভিচ এবং অ্যান্ডি মারের মধ্যবর্তী সেটের বিরতিতে আলোচনা—এমন দৃশ্য এখন সাধারণ হয়ে উঠেছে। মেলবোর্ন পার্কের আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল, যেখানে খেলোয়াড়রা ব্যায়ামাগার, লাউঞ্জ এবং কোর্টের মধ্যে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করেন, তা সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে, যা অনেকটা “বিগ ব্রাদার” এর মতো অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করছে।
প্রযুক্তি এবং বিতর্ক
আয়োজকরা জানিয়েছেন, নেট ক্যামেরা প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেই ব্যবহৃত হয়। এখানেই প্রথমবার তাপমাত্রা স্কেল এবং বায়ুর মান স্কেল চালু করা হয়।
তবে কিছু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এই বছর, ইলেকট্রনিক লেট সেন্সর বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন চেয়ার আম্পায়ার বলটি নেট স্পর্শ করলে তা নিজে শুনে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। তবে খেলোয়াড়রা এই পদ্ধতিকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করছেন। জভেরেভ একে “অযৌক্তিক” বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, “টেনিসে এত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও একটি সাধারণ লেট মেশিন বাদ দেওয়া হয়েছে, যা গত ২৫ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।”
তবে সাধারণ দর্শকরা এসব বিষয়ে খুব বেশি মনোযোগ দেন না। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে দর্শকরা শুধু খেলার জন্য নয়, সঙ্গীত এবং উৎসবের জন্যও আসেন।
টেনিস এবং বিনোদনের সংমিশ্রণ
বিকেল থেকে রাত অবধি কোর্টের প্রধান চত্বরে সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। দর্শকরা ম্যাচের ফাঁকে কিংবা কখনো কখনো ম্যাচ দেখার আগে এই চত্বরে সময় কাটান। কৃত্রিম ঘাসে ছড়ানো সোফা আর কুশন, সঙ্গীত পরিবেশনা, আর হাতে এক গ্লাস লেগার বিয়ার বা হুইস্কি—এই সবকিছু মিলে মেলবোর্ন পার্কে সময় কাটানো এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।